বাংলাদেশে ফিনটেক এর সম্ভাবনা

বাংলাদেশে ফিনটেক এর সম্ভাবনা

 বাংলাদেশের অনুন্নত আর্থিক ব্যবস্থা, বিশাল অব্যবহৃত জনসংখ্যা ও স্মার্টফোন ব্যবহারের হার উদ্ভাবনী ডিজিটাল ফাইন্যান্সগুলোর বিকাশ ঘটিয়েছে। বাংলাদেশে এ খাতটি উদীয়মান পর্যায়ে রয়েছে তবে সাম্প্রতিক বছরগুলো সরকারের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি এক্সিলার, ইনকিউবেটর, স্টার্টআপ ইভেন্ট দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার আলোড়ন তৈরিতে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেছে বাংলাদেশের প্রযুক্তিতে। যেখানে মোবাইল ফোন যোগাযোগের পাশাপাশি আরও অনেক ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ করার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

বিকাশের মতো নন-ব্যাংকিং ফিনটেক সংস্থা বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের মোবাইল মানি সেবার ক্ষেত্রে বাজারের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন পেমেন্ট প্লাটফর্ম হিসেবস স্থান দখল করে রয়েছে। কিছু ব্যাংকও একই পরিসেবাদি সরবরাহ করছে তার মধ্যে রয়েছে- রকেট, এমক্যাশ, ইউক্যাশ তবে তাদের বাজার খুব ছোট। মোবাইল মানি পরিসেবা ছাড়াও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার মতো অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ, বীমা এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবাগুলো প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় করা হয়নি।

বছরের পর বছর ধরে, আর্থিক সেবা সংস্থাগুলো আরও বেশি লোককে তাদের সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে। তবুও, আজ বাংলাদেশের ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই; এখনো নগদ বা অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ আদান-প্রদান করা হয়। যা দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ নয়। সুতরাং বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানের সুবিধা দিলে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির একটি বিশাল অংশকে আনতে সহায়তা করবে।

সঠিক কাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে ফিনটেক এই দৃশ্য পরিবর্তন করতে পারে। ফিনটেক বাংলাদেশের মতো উদীয়মান দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রস্তুত। ভারতের মতো অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলির আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফিনটেকের অনেক উপাদান ইতিমধ্যে গ্রহণ করে এর সুবিধা ভোগ করছে।

ফিনটেক বাংলাদেশের অর্থনীতি কার্যক্রমের সংস্কার করতে পারে। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির মাধ্যমে অর্থ প্রদান বাড়ানো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে এবং কর আদায়ের কার্যকারিতা উন্নত করবে। ফিনটেক নোট মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ পরিমাণ লেনদেন হ্রাস করবে। ফিনটেক দেশে জাল মুদ্রার প্রচারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করবে। নগদ অর্থের হ্রাস প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যয় হ্রাস ও ঝুঁকি পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।

প্রচলিত আর্থিক কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করার ক্ষমতা আছে ফিনটেক। খুচরা আর্থিক ক্রিয়াকলাপ যেমন ঋণ প্রদান বা কোনও বীমা প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য যাচাইকরণ প্রয়োজন। ফিনটেক এই যাচাইকরণের প্রক্রিয়াগুলো স¤পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় করতে পারে। কোনও ব্যক্তি ডিজিটালভাবে সমস্ত সহায়ক নথির সাথে ঋণ আবেদন বা একটি বীমা প্রস্তাব অনলাইনে জমা দিতে পারে ও যাচাইকরণ এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি কয়েক মিনিটের মধ্যেই স¤পন্ন হতে পারে।

প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবেদনকারী অনলাইনে বা ইমেলের মাধ্যমে তার আবেদন স¤পর্কিত প্রতিক্রিয়া পাবেন। এই জাতীয় প্রযুক্তির নেতৃত্বাধীন পরিসেবা ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপগুলোতে ধারাবাহিকতা নিয়ে আসে ও ত্রুটি এবং পক্ষপাতের ঝুঁকি হ্রাস করে। আর্থিক পণ্য বিক্রি করার সময় হ্রাস ও গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বাড়ায় ফিনটেক।

ফিনটেক সক্ষম প্লাটফর্মগুলোতে চ্যাট আলোচনাগুলো সফটওয়্যার রোবট দ্বারা করা হয়, যা চ্যাটবট নামে পরিচিত। একইভাবে, গ্রাহকরা সেবা কেন্দ্রে কল করলে তাদের কলগুলোর উত্তর ডিজিটাল ভয়েস সহায়ক বা হিউম্যানয়েড সফটওয়্যারের মাধ্যমে পান। মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন প্রযুক্তিগুলি এ জাতীয় অর্জন সম্ভব করেছে। এই জাতীয় প্রযুক্তি আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলিকে ব্যয় হ্রাস এবং তাদের পরিষেবার গতি এবং ধারাবাহিকতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় ফিনটেকের কাছ থেকে নানাভাবে উপকৃত হতে পারে বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিসেবাদি নেটওয়ার্কে আরও গতিশীল করার জন্য বাংলাদেশের আর্থিক সেবা সংস্থাগুলো তাদের রূপান্তর যাত্রায় ফিনটেক গ্রহণ করা উচিত।

আপনারা বাংলা ভাষায় ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিনটেক বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশে প্রথম বাংলা ভাষায় রচিত জাহিদুজ্জামানের "ফিনটেক" বইটি পড়তে পারেন। তাহলে এই বিষয়ে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।


লেখক: মুফতি ইয়াসিন আরাফত (CSAA)

সেক্রেটারি, ইসলামিক ফাইন্যান্স রিসার্চ কান্সিল

শরিয়াহ সেক্রেটারি, বিডি ক্রাউড লিমিটেড

প্রিন্সিপাল, ব্রেইনারি ডিজিটাল মাদ্রাসা

হেড অব বিজনেস, ব্রেইন্রি লিমিটেড

Previous Post Next Post

Ads