আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফিনটেকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফিনটেকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে

 যারা সাধারণ ব্যাংকিং করে না, তাদের কাছেও পণ্য এবং সেবা পৌঁছানো যায়। প্রতিযোগিতার যুগে ফিনটেক প্রযুক্তি যেকোনো কো¤পানিকে এগিয়ে রাখে। বিশ্বব্যাপি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে ফিনটেক। বিশ্বের অনেক দেশে ফিনটেক ভিত্তিক কো¤পানি কাজ করছে। যারা আর্থিক সেবা খাতে বাধা দূর করে এর পথ সুগম করে কাজকে সহজ করে চলেছে। আমেরিকার ওয়ারবার্গ পিনকাস, ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ও এমএনএ, চীনের অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল, দুবাইয়ের ফিনটেক ইনোভেশন ইন্টারন্যাশনাল ডিএমসিসি বিশ্বের অন্যতম ফিনটেক কো¤পানি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে অ্যাপের মাধ্যমে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কোথাও না গিয়ে ফিনটেক চালু করতে পারে।

কাগজপত্র পূরণের কোনো ব্যাপার নেই। গ্রাহকদের মৌলিক তথ্য যেমন ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য ও ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দিলেই ফিনটেকের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ তথ্যাদী ভেরিফাই করার পর সঠিক থাকলে তারপর একাউন্টটি চালু হয়। সিকিউরিটি টু সিকিউরিটি মেইনটেইন করা হয় বলে ফিনটেকে আর্থিক লেনদেন নিরাপদ ও ঝুঁকি কম থাকে। পাসওয়ার্ড সচেতনভাবে ব্যবহার করলে ফিনটেকে কোনো সমস্য হবে না।

২০১৮ সালে ব্যাপক বিনিয়োগের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২০১৯ সালে ফিনটেক কম পরিসরে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। একই বছর মার্কিন আর্থিক জয়েন্ট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ও এমএনএ বিনিয়োগ কার্যক্রম বছরের প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। মার্কিন-চীন উভয় দেশের বাণিজ্য উত্তেজনায় চীনের অনেক চুক্তি হ্রাস পায়। চীনের অর্থনীতে হোচঁট খাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ফিনটেক ও ফিনটেক কো¤পানিগুলোর দিকে নজর দিতে থাকে।

সিবি ইনসাইটের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিনটেকের চুক্তি ও অর্থায়নের জন্য একটি রেকর্ড বছর ছিল। প্রত্যেক বছরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিনটেকের চুক্তি ও অর্থায়ন বেড়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে ১৯ শতাংশ ছিলে ২০১৮ সালে তা বেড়ে ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সাধারণভাবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ফাইনটেক স্টার্টআপগুলো বেশি তহবিল ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। ২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা ছিল ভিয়েতনাম-ভিত্তিক ফাইনটেক মেজর মোমো। যা ওয়ারবার্গ পিনকাস থেকে সিরিজ সি তহবিল হিসেবে ১০০ মিলিয়ন নেয়।

চীনের টেক জায়ান্ট আলিবাবা গ্রæপের প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আগ্রাসীভাবে নিজেদের প্রসারিত করতে চাইছে। অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল বিভিন্ন সহায়ক সংস্থার মাধ্যমে অর্থ প্রদান, বীমা, ঋণ, স¤পদ ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য আর্থিক সাবসিডিয়ারি পরিসেবা দিয়ে যাচ্ছে। অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল একাই ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা ২০১৮ সালের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৩৫ শতাংশ বলে জানায় সিবি ইনসাইট।

সিবি ইনসাইটস জানায়, মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ২০১৮ সালের বিনিয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের ঋণের ২৯.৫৭ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী ১৭০৭টি চুক্তি করেছে। বছরে ১৫ শতাংশ চুক্তি বেড়েছে। অনন্য ফিনটেকগুলো বার্ষিক ১৪৬৩ সংস্থার সাথে চুক্তি করেছে। অন্যান্য বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল ২৭৪৫, যার বেশির ভাগই কর্পোরেট বিনিয়োগকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে ১১.৮৯ বিলিয়ন ডলারের ৯৬৫ টি বিনিয়োগ করে শীর্ষ ফিনটেক বাজার হিসাবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে এশিয়া এটিকে প্রারম্ভিক পর্যায়ে দেখছে। ধীরে ধীরে মেগা বিনিয়োগ করছে। এশিয়ায় বছরে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়ার ফিনটেক সংস্থাগুলোর তহবিলের পরিমাণ ২২.৬৫ বিলিয়ন ডলার যা ৫১৬ টি চুক্তির মাধ্যমে করেছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৬৯ গবেষণা পত্রে ১,৩৮৫টি ফিনটেক সংস্থার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংস্থাগুলো ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২০ সালে বহুগুণ উন্নতি সাধন করেছে। ডিজিটাল এক্সচেঞ্জ, পেমেন্ট, সঞ্চয়, এবং স¤পদ পরিচালনা সংস্থাগুলি লেনদেনের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ এবং ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ফিনটেক প্রযুক্তির প্রবৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ, উপ-সাহারিয়ান আফ্রিকা এবং উত্তর আমেরিকায় বৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ।  তাছাড়াও উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি অন্যান্ন উন্নত বাজারগুলির চেয়ে দ্রæত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।


লেখক: মুফতি ইয়াসিন আরাফত (CSAA)

সেক্রেটারি, ইসলামিক ফাইন্যান্স রিসার্চ কান্সিল

শরিয়াহ সেক্রেটারি, বিডি ক্রাউড লিমিটেড

প্রিন্সিপাল, ব্রেইনারি ডিজিটাল মাদ্রাসা

হেড অব বিজনেস, ব্রেইন্রি লিমিটেড

Previous Post Next Post

Ads