ফিনটেকের পরিচয় ও ইতিহাস (সংক্ষেপে)

ফিনটেকের পরিচয় ও ইতিহাস (সংক্ষেপে)

 আমাদের চারপাশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আগামীর দিনগুলোতে আরো বেশকিছু পরিবর্তনের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এরকম একটি পরিবর্তন হচ্ছে ফিনটেক (Fintech)। ফিনটেক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ফাইন্যান্স ও টেকনোলজির সমন্বয়ে। সহজ ভাষায়, সনাতন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুবিধাজনকভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই হলো ফিনটেক। ১৮৭৬ সালে ট্রান্সআটলান্টিক টেলিগ্রাফ ক্যাবল উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আধুনিক ফিনটেকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা যোগাযোগে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দেয়।

FinTech

ফিনটেক (Fintech) হচ্ছে একটি শক্তিশালী মাধ্যম যার মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। বিশেষত সমাজের সকল শ্রেণীকে ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় আনতে ফিনটেক এর জুড়ি নেই। ফিনটেক দিয়ে সহজেই ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিকে জনগণের একজন ভালো বন্ধু হিসেবে গড়ে তোলা যায়। যারা সাধারণ ব্যাংকিং করে না, তাদের কাছেও পণ্য ও সেবা পৌঁছানো যায় ফিনটেক প্রযুক্তির মাধ্যমে।  বিশ্বব্যাপি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে ফিনটেক। কাগজপত্র পূরণের কোনো ব্যাপার নেই। গ্রাহকদের মৌলিক তথ্য যেমন ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য ও ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দিলেই ফিনটেকের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ তথ্যাদী ভেরিফাই করার পর সঠিক থাকলে তারপর একাউন্টটি চালু হয়। সিকিউরিটি টু সিকিউরিটি মেইনটেইন করা হয় বলে ফিনটেকে আর্থিক লেনদেন নিরাপদ ও ঝুঁকি কম থাকে। পাসওয়ার্ড সচেতনভাবে ব্যবহার করলে ফিনটেকে কোনো সমস্য হয় না। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো স্বয়ংক্রিয়করণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিনটেক ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স জনগণের কাছে প্রাথমিক ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা আনতে মৌলিক ভ‚মিকা পালন করার সম্ভাবনা রাখে। বাংলাদেশের অনুন্নত আর্থিক ব্যবস্থা, বিশাল অব্যবহৃত জনসংখ্যা ও স্মার্টফোন ব্যবহারের হার উদ্ভাবনী ডিজিটাল ফাইন্যান্সগুলোর বিকাশ ঘটিয়েছে। বিকাশের মতো নন-ব্যাংকিং ফিনটেক সংস্থা বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের মোবাইল মানি সেবার ক্ষেত্রে বাজারের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন পেমেন্ট প্লাটফর্ম হিসেবে স্থান দখল করেছে। মোবাইল মানি সেবা ছাড়াও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা যেমন অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ, বীমা এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবাগুলো প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বয়ংক্রিয় করার কাজ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সহ ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এ ব্যাংকগুলোর মোট শাখা ১০,৫৮৮টি ও এজেন্ট ব্যাংকিং ৮৭৬৪টি। এছাড়া যমুনা ব্যাংকও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং এ রুপান্তরিত হওয়ার অনুমোদন লাভ করেছে। তাছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাংক সোনালী ব্যাংক সহ প্রচলিত ধারার বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১৯টি শাখা ও ১৬৬টি উইন্ডো ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে ইসলামিক ফিনটেকের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ফিনটেক আধুনিক অর্থায়নে রুপান্তর ও বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং সেক্টরের বিভিন্ন রূপ সংশোধনে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) রিপোর্ট অনুসারে, বিকাশ উদ্ভাবনের আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪৩ মিলিয়ন, যা ২০১৭ সালে ১৪৩ মিলিয়ন হয়েছিল। দেশে বর্তমানে দশটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, প্রচলিত ব্যাংকের ১৮০ টি ইসলামিক উইন্ডো ও শাখা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো পুরো ব্যাংকিংয়ের প্রায় ২৫% মার্কেট শেয়ার দখল করে রেখেছে। সুতরাং এ পরিমাণ মার্কেট শেয়ারের সাথে, যদি ইসলামী ব্যাংকগুলি ফিনটেকর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে সকল সুবিধা ও পরিষেবাদি পৌঁছে দিতে পারে। তাহলে গ্রাহকরা তাদের কাছেই আসবে। যদিও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) "এমক্যাশ", "সেলফিন", "আই স্মার্ট" চালু করেছে। তবুও তা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদানকারীদের মতো অনেক সুবিধা দিতে পারেনি। তাছাড়া আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক স¤প্রতি "ইসলামিক ওয়ালেট", সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক "এসআইবিএল নাও", ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক "এফএসআইবিএল ক্লাউড" মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে, তবে এখন পর্যন্ত এগুলো অনেকের কাছে পৌঁছতে পারেনি। যদি ইসলামী ব্যাংকগুলি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা করতে পারে. সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী আরও বেশি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি আকর্ষিত হবে। ইসলামিক ফিনটেক দেশের ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টরে এক বিশাল সাফল্য বয়ে আনবে।


লেখক:

মুফতি ইয়াসিন আরাফত (CSAA)

সেক্রেটারি, ইসলামিক ফাইন্যান্স রিসার্চ কান্সিল

শরিয়াহ সেক্রেটারি, বিডি ক্রাউড লিমিটেড

প্রিন্সিপাল, ব্রেইনারি ডিজিটাল মাদ্রাসা

হেড অব বিজনেস, ব্রেইন্রি লিমিটেড

Previous Post Next Post

Ads