কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

 কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

মানব সমাজে অর্থের ব্যবহার যেদিন শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই মানুষের অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের একটি সুপ্ত বাসনা কাজ করেছে। যার ফলশ্রæতিতে মানুষ অতিরিক্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাড়তি অর্থ উপার্জনের চেষ্টা চালিয়েছে এবং সফলও হয়েছে। তারা বিত্তের মালিক হয়েছে, যদিও এই বিত্ত যথাযথভাবে সংরক্ষণের তেমন কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থা ছিল না। এতে তারা তাদের উপার্জিত অর্থকে কোথাও না কোথাও একত্রিত করে স্তুপ আকারে সংরক্ষণ করতো। এই স্থুপীকৃত সম্পত্তিকে বোঝানোর জন্যই ব্যাংক (ইধহশ) শব্দটির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে শপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অভিভাবক হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করে। নিচে পর্যায়ক্রমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমবিকাশ ও ইতিহাস তুলে ধরা হলো:

প্রাথমিক পর্যায়: ১৬৫৬ সালে রিকস ব্যাংক অব সুইডেন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং ইতিহাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাত্রা শুরু। ফলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাস খুব অতীত দিনের নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থার উদ্ভবের পূর্বে পৃথিবীর অনেক দেশে প্রখ্যাত বাণিজ্যিক ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভ‚মিকা পালন করতে দেখা গেছে। আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থার জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে। ১৬৬৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্যে। এ ব্যাংকের জন্মই হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে। সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কোনো কার্য সম্পাদনের ইতিহাস এ ব্যাংকের নেই। প্রথমদিকে এ ব্যাংককে সরকার কর্তৃক সীমিত আকারে নোট প্রচলনের এখতিয়ার প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়: ১৬৯৪ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে মর্যাদা লাভ করে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৬৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রিকস ব্যাংক অব সুইডেন বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৬৮৮ সালে পূর্ণগঠিত করে শক্তিশালী সরকারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিণত করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাস পাওয়া যায় ফ্রান্সে। ফ্রান্স থেকেই বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার একটি গণজোয়ার শুরু হয়। 

তৃতীয় পর্যায়: ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ এ্যাক্ট এর আওতায় ১২ টি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এর সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর প্রথম মহাযুদ্ধের সময়টি হচ্ছে ব্যাংকের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। যুদ্ধের ডামাডোলে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে অর্থনৈতিক বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে ১৯২০ সালে ব্রাসেলস-এ একটি আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মহাসম্মেলনে অর্থনৈতিক বিশৃংখলা তথা মুদ্রাবাজার ও ঋণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সকল দেশেই একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তের আলোকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে খুব দ্রæত গতিতে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। 

কিন্তু এশিয়া মহাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাস একটু প্রাচীন। ১৮৮২ সালে জাপানে প্রথম ব্যাংক অব জাপান প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর এর প্রভাব পড়ে পাক ভারত উপমহাদেশে। ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ভারত ভাগ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান।

নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশে (প্রেসিডেন্টের ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বরের ঘোষণা অনুযায়ী) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Previous Post Next Post

Ads