ফিনটেকের ইতিহাস

ফিনটেকের ইতিহাস

 ফিনটেক বলতে ফাইন্যান্সিয়াল ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহারকে বোঝায়। ফাইন্যান্স ও টেকনোলজি শুরু থেকেই একসাথে ছিল। আমরা যদি হাজার বছর পেছনে ফিরে যাই তাহলে দেখতে পাব টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হয়েছিল কৃষি সভ্যতার শুরু থেকে। সে সময় বাড়ি নির্মাণ, খাজনা আদায়, রাজকোষের অর্থনৈতিক কর্মকাÐের হিসাব রাখা ইত্যাদি কাজে টেকনোলজির ব্যবহার হতো। প্রথম ভৌত টেকনোলজির উন্নতি সাধন হয়েছিল সাধারণ কয়েন মুদ্রার মাধ্যমে, তারপরে আসলো কাগজি মুদ্রা। মুদ্রা হলো প্রযুক্তির একটি ধরন যা ভৌতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই দেখা যায় ফিন্যান্সিয়াল ক্ষেত্রে টেকনোলজি যুক্ত হওয়ার ইতিহাস অনেক অনেক পুরনো।

কিন্তু আমরা যদি বর্তমান সময়ের ফিনটেক এবং ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি নিয়ে কথা বলি তাহলে এর ইতিহাস মাত্র ১৫০ বছর আগে থেকে লিখতে হবে। মূলত ১৮৭৬ সালে ট্রান্সআটলান্টিক টেলিগ্রাফ ক্যাবল উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে আধুনিক ফিনটেকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা যোগাযোগে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দেয়। এর মাধ্যমে প্রথম নিউইয়র্ক বাজারের সাথে লন্ডনের বাজারের যোগসূত্র স্থাপন হয়েছিল, পরে লন্ডন এবং প্যারিস যুক্ত হয়েছিল। তার কয়েক দশক পরে সাংহাই ও হংকং লন্ডনের সাথে যুক্ত হয়েছিল। এই ছিল প্রাথমিক ফাইন্যান্স এবং টেকনোলজির অবকাঠামো। প্রথম বিশ^যুদ্ধ পর্যন্ত এর ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। সেই সময়ে একে ভিক্টোরিয়ান ইন্টারনেট বলা হতো। 

আধুনিক ফিনটেকের সূচনা হয় ১৯৬৭ সালে। এই বছরের ২৭ জুন ইংল্যান্ডে প্রথম ATM (এটিএম) মেশিন চালু করে Barclays Bank এরপর ধারাবাহিকভাবে আসে প্রথম হাতে ধরা ক্যালকুলেটর। তাই ১৯৬৭ সালকে ডিজিটালাইজেশনের প্রারম্ভিক সাল হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর এ সেক্টরে বিপ্লব আসে ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে, যার গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৭০ এর শুরুর দিকে। আর এই ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম বিষয়টি সুইফটের ধারণাকে নিয়ে আসে। দুইটি দেশ বড় বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন করতে শুরু করে সুইফটের মাধ্যমে। এরপর ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় NASDAQ। এটি হলো বিশে^র প্রথম ইলেক্ট্রনিক স্টক বিনিময় মাধ্যম। বর্তমানে আমরা গেøাবাল ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট দেখতে পাই, যেখানে এক দেশের মুদ্রার বিপরীতে অন্য দেশের মুদ্রা কেনা হয়, যেমন ডলারের বিপরীতে ইয়েন বা আরএমবি। এই মার্কেটে একদিনে প্রায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো লেনদেন হয়। এসব লেনদেন নগদ মুদ্রায় হয় না, কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন হয়, অর্থাৎ, ডিজিট স্থানান্তরের মাধ্যমে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালের পর থেকে অনলাইন ব্যাংকিং শুরু হয় এবং ১৯৯৯ সালের পর থেকে বাজারে আসে গুগল বা অ্যামাজনের মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। পেপালের আবিষ্কার ডিজিটাল মানির ধারণা পাল্টে দেয়। ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেমে ডিজিটালাইজেশন বড় একটি মোড় নেয় ২০০৮ সালের বিশ্¦মন্দার পরবর্তী সময়ে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পরেই মূলত ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণা আসে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে গুগল, অ্যামাজনের মতো জায়ান্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজির উৎকর্ষ সাধনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে।


লেখক: মুফতি ইয়াসিন আরাফত (CSAA)

সেক্রেটারি, ইসলামিক ফাইন্যান্স রিসার্চ কান্সিল

শরিয়াহ সেক্রেটারি, বিডি ক্রাউড লিমিটেড

প্রিন্সিপাল, ব্রেইনারি ডিজিটাল মাদ্রাসা

হেড অব বিজনেস, ব্রেইন্রি লিমিটেড

Previous Post Next Post

Ads